টারনারী সংখ্যা পদ্ধতি

আমরা সবচেয়ে বেশী যে সংখ্যা পদ্ধতিটি ব্যাবহার করি তা হল দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বা দশ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। এমন আরও অনেক সংখ্যা পদ্ধতি রয়েছে যেমন বাইনারি, ডেসিম্যাল, হেক্সা ডেসিম্যাল ইউনারি ইত্যাদি। এগুলো মোটামুটি আমাদের সবারই পরিচিত। তবে সংখ্যার রাজ্য অনেক বিশাল, সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রয়োজন হয় গননার আর তাই আদিম বিচ্ছিন্ন পৃথিবীতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতি। যেমন প্রাচীন মায়ানরা ব্যাবহার করত ২০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি, বুলেট চিহ্ন ও আনুভুমিক দাগ এ দুটি চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করত সব সংখ্যা। আবার ব্যাবিলিওন এর মানুষগুলোতো গুনত ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা দিয়ে!!!! ভিত্তি যাই হোক না কেন, প্রতিটি সংখ্যা পদ্ধতির মধ্যে আছে সম্পর্ক কারণ একটা গরু বলতে তো আমরা একটা গরুকেই বুঝি! যেভাবেই গোনা হোক না কেন, গননার পরিমান কিন্তু একই। তবে আজকের আলোচনার বিষয় বড় বড় ভিত্তির কোন সংখ্যা নয়, তিন ভিত্তিক টারনারী সংখ্যা পদ্ধতি। 

টারনারী সংখ্যা পদ্ধতি হল ৩ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি অর্থাৎ এখানে তিনটি ডিজিট ব্যাবহারিত হয়- ০,১,২। তিনটি ডিজিট থাকার কারনে এটি বাইনারি সংখ্যার মত এত দ্রুত বড় হয়ে যায় না। যেমন দশমিকের ১ এর টারনারী মান ১, ২ এর জন্য ২, কিন্তু ৩ এর টারনারী মান ১০। এভাবে ৪,৫,৬ এর জন্য টারনারী মানগুলো হল ১১,১২,২০। যেখানে ৬ এর বাইনারি মান ১১০। নিম্নের চার্টটি দেখলে ব্যাপারটি আরও পরিষ্কার হবে। 

• দশমিক                          টারনারী                        বাইনারি  
• ১                                      ১                                ১
• ২                                      ২                                ১০
• ৩                                     ১০                              ১১
• ৪                                      ১১                              ১০০
• ৫                                      ১২                              ১০১

টারনারী থেকে দশমিকে রুপান্তরঃ    

অন্যান্য সংখ্যা পদ্ধতির মতই টারনারী থেকে দশমিকে রূপান্তরও আমরা একই নিয়মে করতে পারি। 

যেমন টারনারী ১১০ এর ক্ষেত্রে- 

110= 1x3^2 + 1x3^1 + 0x3^0 = 12 । 

দশমিক থেকে টারনারীতে রুপান্তরঃ 

এটিও অন্যান্য সংখ্যা পদ্ধতির নিয়মই মেনে চলে। ১৪ এর টারনারী মানঃ 

14 / 3 = 4 - 2

4 / 3 = 1 - 1

1 / 3 = 0 - 1 

এখন ভাগশেষগুলোকে নীচ থেকে উপরে সাজালে পাই ১১২। অর্থাৎ১৪ এর টারনারী মান ১১২।

টারনারী সংখ্যা পদ্ধতির সাথে সম্পর্কযুক্ত সংখ্যা পদ্ধতি হল ননারি (নয় ভিত্তিক) ও septemvigesimal (২৭ ভিত্তিক) । টারনারী সংখ্যা পদ্ধতি কিন্তু আমারা নানা জায়গায় ব্যাবহার ও করি। অ্যানালগ লজিক সার্কিটে এর ব্যাবহার দেখা যায়। মূলত TTL এ তিন ধরনের অবস্থা নির্দেশিত হয়- উচ্চ, নিম্ন ও মাঝামাঝি (High-Z) । ফোন মেনু সিস্টেম, কিছু নিম্ন পর্যায়ের সফটওয়্যারে গতি দ্রুত করার জন্য এটি প্রয়োগ করা হয়। Setun নামে একটি টারনারী কম্পিউটার ও আছে। মুসলিমরা তসবিহ গুনতে টারনারী বা বিজোড় পদ্ধতি ব্যাবহার করে। মজার বিষয় হল, বেস্‌বল খেলতে যেয়েও নিজের অজান্তেই তুমি কিন্তু এ পদ্ধতি ব্যাবহার করছ!!!!